এপ্রিল ৩, ২০২১
আশাশুনি সদরে পান যোগ্য পানির তীব্র সংকট দুধের দামে পানি কেনা: ভোগান্তি এখন নিত্য সঙ্গী
নিজস্ব প্রতিনিধি : বাড়ীর আশেপাশে শুধুই লোনা আর বিষাক্ত পানি। সুপেয় পানি দুরের কথা রান্না ও গোসলের পানি নেই। ওই লোনা বিষাক্ত পানি দিয়েই শৌচক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে। যাদের এলার্জির সমস্যা তাদের ভোগান্তি আরও মারাত্মক। সব মিলিয়ে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে আশাশুনি সদরের দক্ষিনপাড়া, দয়ারঘাট ও জেলেখালী গ্রামের মানুষেরা। সাপ্লাই পানির লাইনের পাইপ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সমস্যাটা আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। নলক‚পের স্যালাইন পানিই গোসলসহ ধোওয়া মোছার কাজের এক মাত্র ভরসা। এক কলস সুপেয় পানির জন্যই তাই দেড় মাইল দুর থেকে নলক‚পের পানি খেতে বাধ্য হচ্ছে এসব মানুষেরা। যাদের সামর্থ্য আছে তারা পানি কিনে পান করছেন। এসব সামর্থ্যবানরাও আছেন পানি নিয়ে নানা সমস্যা ও সংকটে । আম্পানে ভেঙে যাওয়ার পর দয়ারঘাট টু আশাশুনি সদরের প্রধান সড়কের উপর দিয়ে রিং বাঁধ দেওয়ায় ভ্যান যাতায়াত করতে পারতো না। এরপর আবার ৩০ মার্চ সেই রিং বাঁধ ভেঙে পানির ে রাস্তাগুলি গভীর খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। দক্ষিন পাড়ায় ইটের সোলিং রাস্তার উপর দিয়ে ে যাওয়ায় সেই ইটগুলি পার্শ্ববর্তী ঘেরে গিয়ে পড়েছে। রাস্তা দিয়ে কোনভাবেই ভ্যান যেতে পারেনা। তাই মধ্যবিত্তদের পানি কিনে বাড়ী নেওয়ার উপায় নেই। ৩০ লিটার পানির দাম ১৫ টাকা আর বহন খরচ ১৫ থেকে ২০ টাকা। অর্থাৎ দুধের দামে পানি কেনার সামিল হয়েছে মানুষের। এলাকার একমাত্র আয়ের উৎস মাছ চাষ। কিন্তু আম্পানের রেশ কাটতে না কাটতে রাক্ষুসী খোলপেটুয়া আবারও ভাসিয়ে দিয়েছে আশাশুনি সদরের ঘেরগুলি। কারও কোন উপার্জনের পথ নেই। করোনা মহামারীতে উপার্জনের জন্য বাইরে কোথাও বেরোবার উপায় নেই। তারমধ্যে এই পানির সমস্যা আরও ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পরদিন থেকে জনস্বাস্থ্য থেকে ৩ হাজার লিটার করে পানি দেওয়া হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু করে ৩টা পর্যন্ত তারা পানি সরবরাহ করেন। তাদের ট্যাংকির পানি ফুরিয়ে গেলে আবার উপজেলা থেকে পানি নিতে আবার ঘণ্টাখানেক দেরি হয়। একবার ফসকে গেলে আবার দীর্ঘ সময় রোদে বসে অপেক্ষা করতে হয় নারীদের। দয়ারঘাট গ্রামের শিলা রানী জানান- লাইনে রোদে দাড়িয়ে থাকার সময় নেই তাই দেড় মাইল দুরে আলিয়া মাদ্রাসার সামনে বাদশা ভাইয়ের বাড়ী থেকে পায়ে হেঁটে জল নিয়ে আসি। সাপ্লাইয়ের জল শুকনো মৌসুমে খাবার অনুপোযোগি হয়ে পড়ে। তবুও ফিল্টারিং করে খাওয়া যেতো। কিন্তু রিংবাঁধ ভেঙে লাইনের পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। সে জল আবার কবে পাবো তার ঠিক নেই। বাসন্তী রানী জানান- পঞ্চানন কাকার বাড়ীর সামনে পানি দিলে আমাদের খুব উপকার হয়। আমরা খুবই জলকষ্টে আছি। আমাদের মাইলের পর মাইল হেঁটে জল আনতে হবে না হলে বর্ষার জলই ভরসা। কিন্তু বর্ষার জল ধরে রাখার জন্য পানির ট্যাংকি নেই। অনেকেই দেখি সরকারি ট্যাংকি পায় কিন্তু আমাদের দয়ারঘাট গ্রামের একটাও দেওয়া হয় না। কারা আনে কারা পায় কে জানে। আপনারা পানি দিয়ে আমাদের বাঁচান। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার খোলপেটুয়ার প্রবল জোয়ারে আশাশুনি সদরের রিংবাঁধ ভেঙে ৩ টি গ্রাম ও শতশত মৎস্যঘের প্লাবিত হয়। বৃহস্পতিবার রিংবাঁধটি আবার আটকে দেওয়া হয়েছে এবং মুল বাঁধের কাজ চলছে দ্রæত গতিতে। 8,416,294 total views, 67 views today |
|
|
|